Syed Mujtaba Ali Quotes

We've searched our database for all the quotes and captions related to Syed Mujtaba Ali. Here they are! All 57 of them:

ইউরোপে cold blooded খুন হয়, ভারতবর্ষে কোল্ড-ব্লাডেড্ বিয়ে হয়।
Syed Mujtaba Ali (চাচা কাহিনী)
যে ব্যামোর দেখবেন সাতান্ন রকমের ওষুধ, বুঝে নেবেন, সে ব্যামো ওষুধে সারে না।
Syed Mujtaba Ali (চাচা কাহিনী)
ভেবে-চিন্তে অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করে বই কেনে সংসারী লোক। পাঁড় পাঠক বই কেনে প্রথমে দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে, তারপর চেখে চেখে সুখ করে করে, এবং সর্বশেষে সে কেনে ক্ষ্যাপার মত, এবং চুর হয়ে থাকে মধ্যিখানে। এই একমাত্র ব্যসন, একমাত্র নেশা যার দরুন সকালবেলা চোখের সামনে সারে সারে গোলাপি হাতি দেখতে হয় না, লিভার পচে পটল তুলতে হয় না।
Syed Mujtaba Ali
কিন্তু বাঙালি আর কিছু পারুক না পারুক,বাজে তর্কে খুব মজবুত ।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
পৃথিবীর আর সব সভ্য জাত যতই চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, আমরা ততই আরব্য-উপন্যাসের এক-চোখা দৈত্যের মতো ঘোঁৎ ঘোঁৎ করি আর চোখ বাড়াবার কথা তুললেই চোখ রাঙাই। চোখ বাড়াবার পন্থাটা কী? প্রথমত : বই পড়া এবং তার জন্য দরকার বই কেনার প্রবৃত্তি।
Syed Mujtaba Ali
বহুদিন ধরে সাবান ছিল না বলে আবদুর রহমানের পাগড়ী ময়লা। কিন্তু আমার মনে হল চতুর্দিকের বরফের চেয়ে শুভ্রতর আবদুর রহমানের পাগড়ী, আর শুভ্রতম আবদুর রহমানের হৃদয়!
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
আইন মানুষকে এক পাপের জন্য সাজা দেয় একবার, সমাজ কতবার, কত বৎসর ধরে দেয় তার সন্ধান কোনো কেতাবে লেখা নেই, কোনো বৃহস্পতিও জানেন না।
Syed Mujtaba Ali
কিন্তু বই কিনে কেউ তো কখনো দেউলে হয়নি।
Syed Mujtaba Ali
যে ডাক্তার যত বড় তার হাতের লেখা তত খারাপ
Syed Mujtaba Ali
মানুষের ভক্তি যতই গভীর হোক, সেটা অতল নয়-গভীরতম মহা-সমুদ্রেরও তল আছে।
Syed Mujtaba Ali (হিটলার)
আমার চাকরের নাম কাট্টু, কেননা সে পকেট কাটে, মাছের মাথা কাটে, আর প্রয়োজন হলে মনিবের মাথা কাটে।
Syed Mujtaba Ali
সেনসর বোর্ড ফোর্ড ও তখন শিশু, এখনকার মত জ্যাঠা হয়ে উঠেনি, কাজেই হরেক রুচির ফিল্ম তখন এদেশে অক্লেশে আসত এবং আমরা সেগুলো গোগ্রাসে গিলতুম, তার ফলে আমাদের চরিত্র সর্বোনাশ হয়েছে সে কথা কেউ কখনো বলেনি এবং আজ যে সেন্সর বোর্ডের এত কড়াকড়ি, তার ফলে এ যুগের চ্যাংড়া চিংড়িরা যীশুখেস্ট কিংবা রামকেষ্ট হয়ে গিয়েছে এ মস্করাও কেউ করেনি
Syed Mujtaba Ali (চতুরঙ্গ)
সরল হৃদয় মনে করে প্রেম লুকায়ে রাখিতে পারে কাঁচের ফানুস মনে ভাবে লুকায়েছে শিখাটারে।।
Syed Mujtaba Ali (শবনম)
আমি এ জীবনে তিনখানা হিন্দি ছবিও দেখিনি এবং অন্য কোন পাপ করিনি বলে এই পূণ্যের জোরেই স্বর্গে যাবো বলে আশা রাখি। তবে বলা যায়না, সেখানে হয়তো হিন্দী ছবি-ই দেখতে হবে। যদি প্রশ্ন শোধান, সে কি করে হয়? – তুমি হিন্দী ফিলিম বর্জন করার পূণ্যে স্বর্গে গেলে, সেখানে আবার তোমাকে ঐ ‘মাল’ই দেখতে হবে কেন? তবে উত্তরে নিবেদন, কামিনীকাঞ্চনসুরা বর্জন করার জন্য আপনি যখন স্বর্গে যাবেন তখন কি ইন্দ্রসভায় ঐ গুলোরই ছড়াছড়ি দেখতে পাবেননা?
Syed Mujtaba Ali (চতুরঙ্গ)
জর্মন ভাষাতেই প্রবাদ আছে, ওষুধ খেলে সর্দি সারে সাত দিনে, না খেলে এক সপ্তায়।
Syed Mujtaba Ali (চাচা কাহিনী)
শত্রুর মিলনে মনে অতি কষ্ট হয় বন্ধুর বিচ্ছেদে কষ্ট হয় সাতিশয়। উভয়েই বহু কষ্ট দেয় যদি মনে শত্রু মিত্রে কিবা ভেদ তবে এ ভুবনে?
Syed Mujtaba Ali (শবনম)
কে বল সহজ, ফাঁকা যাহা তারে, কাঁধেতে বহিতে যাওয়া। জীবন যতই ফাঁকা হয়ে যায়, ততই কঠিন বওয়া।
Syed Mujtaba Ali (শবনম)
আমার বিরহে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেওনা। আমার ওটুকুতেই চলবে।
Syed Mujtaba Ali (শবনম)
ডাক্তার উৎসাহিত হয়ে আরো কি যেন বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় আস্তে আস্তে দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন এক সুন্দরী- হ্যাঁ, সুন্দরী বটে। এক লহমায় আমি নর্থ সীর ঘন নীল জল, দক্ষিণ ইটালির সোনালি রোদে রূপালি প্রজাপতি, ডানয়ুবের শান্ত-প্রশান্ত ছবি, সেই ডানয়ুবেরই লজ্জাশীল দেহচ্ছন্দ, রাইনল্যান্ডের শ্যামলিয়া মোহনীয়া ইন্দ্রজাল সব কিছুই দেখতে পেলুম। আর সে কী লাজুক হাসি হেসে আমার দিকে তিনি হাত বাড়ালেন। আমি মাথা নীচু করে ফরাসিস কায়দায় তাঁর চম্পক করাঙ্গুলিপ্রান্তে ওষ্ঠ স্পর্শ করে মনে মনে বললুম, বেঁচে থাকো সর্দি-কাশি চিরজীবী হয়ে তুমি।
Syed Mujtaba Ali (চাচা কাহিনী)
রাজসভাতে এসেছিলাম বসতে দিলে পিছে, সাগর জলে ময়লা ভাসে, মুক্তো থাকে নিচে।
Syed Mujtaba Ali (শবনম)
আকাশের জল আর চোখের জল একই কারণে ঝরে না
Syed Mujtaba Ali (শবনম)
হাজার যোজন নিচে নামিয়া আকাশের ঐ তারা গোস্পদে হ'ল প্রতিবিম্বিত ; তাই হল মানহারা?
Syed Mujtaba Ali (শবনম)
তুমি বলেছিলে 'ভাবনা কিসের? আমি তোমারেই ভালোবাসি; আনন্দে থাকো, ধৈর্য-সলিলে ভাবনা সে যাক ভাসি।' ধৈর্য কোথায়? কিবা সে হৃদয়? হৃদয় কাহারে কয়? সে তো শুধু এক বিন্দু শোণিত আর ফরিয়াদ-রাশি।।
Syed Mujtaba Ali (শবনম)
দোস্ত! তুমহারী রোটি, হমারা গোস্ত!
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
বোরকা পরে, ঐ যা। তা না হলে পাঠান মেয়েও স্বাধীন।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
প্রেম গোপন রাখাতে যে গভীর আনন্দ আছে তার থেকে আমি তাকে বঞ্চিত করতে যাব কেন? শুনেছি প্রথম গর্ভধারণ করে বহু মাতা সেটা যত দিন পারে গোপন রাখে। নিভৃতে আপন মনে সেই ক্ষুদ্র শিশুটির কথা ধ্যান করতে করতে সে চলে যায় স্বর্গলোকপানে, যেখান থেকে মুখে হাসি নিয়ে নেমে আসবে এই শিশুটি। 
Syed Mujtaba Ali (শবনম)
সর্দারজী হেসে বললেন, 'কিছু ভয় নেই, পেশাওয়াৱ স্টেশনে এক গাড়ি বাঙালী নামে না, আপনি দু'মিনিট সবুর করলেই তিনি আপনাকে ঠিক খুঁজে নেবেন।' আমি সাহস পেয়ে বললুম, 'তা তাে বটেই তবে কিনা শৰ্ট পরে এসেছি ---' সর্দারজী এবার অট্টহাস্য করে বললেন, ‘শর্টে যে এক ফুট জায়গা ঢাকা পড়ে তাই দিয়ে মানুষকে চেনে নাকি?
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
ভাষাতত্ত্ব নিয়ে আমার মনে তখন আরও একটা খটকা লাগল ৷ রেডিয়ােওয়ালার চোস্ত ফার্সী জানার কথা। তাকে জিজ্ঞাসা করলুম, ‘ঐ যে সরাইওয়ালা বলল, ‘মাল-জানের’ তদারকি আপন আপন কাঁধে এ কথাটা আমার কানে কেমনতরো নূতন ঠেকলো। সমাসটা কি ‘জান-মাল’ নয়?’ অন্ধকারে রেডিয়োওয়ালার মুখ দেখা যাচ্ছিল না। তাই তার কথা অনেকটা বেতারবার্তার মত কানে এসে পৌঁছল। বললেন, 'ইরানদেশের ফার্সীতে বলে, 'জান-মাল' কিন্তু আফগানিস্থানে জান সস্তা, মালের দাম ঢের বেশী৷ তাই বলে 'মাল-জান’। আমি বললুম, 'তাই বোধ করি হবে। ভারতবর্ষেও প্রাণ রেজায় সস্তা --- তাই আমরাও বলি ‘ধনে-প্রাণে’ মেরো না। ‘প্রাণে-ধনে’ মেরাে না কথাটা কখনো শুনিনি৷
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
খুদাবখ্‌শ আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন আমি বদ্ধ উন্মাদ। কিন্তু মুখে কথা ফুটল। বললেন, 'আপনি পর্যন্ত এই কথা বললেন? ছেলে মরেছিল তো কি? আবার ছেলে হবে। বিবি মরেছেন তো কি? নূতন শাদী করব। কিন্তু ভাই পাব কোথায়?' তারপর আবার হাউহাউ করে কাঁদেন আর বলেন, 'আমার ভাই মরে গিয়েছে।' অধ্যাপক বলা শেষ করলে আমি বললুম, 'লক্ষ্মণের মৃত্যুশোকে রামচন্দ্রও ঐ বিলাপ করেছিলেন।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
চোখের রোশনাই নেই বলে তিনি হৃদয় দেখতে পান
Syed Mujtaba Ali (শবনম)
কাফেলা যখন পৌছালো গৃহে মরভু্ূমি হয়ে পার সবাই নীরব।উটের গলায়ও ঘন্টা বাজে না আর।
Syed Mujtaba Ali (শবনম)
বলা তো যায় না, ফিরিঙ্গীর বাচ্চা- কখন রঙ বদলায়।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
অমর সিং নূতন গাড়ি চালিয়ে সুখ পায় না। পদে পদে যদি টায়ার না ফাটল, এঞ্জিন না বিগড়ল, ছাতখানা উড়ে না গেল, তবে সে মোটর চালিয়ে কি কেরামতি? সে গাড়ি তো বোরকা-পরা মেয়েই চালাতে পারে।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
বাঙালী আপন দেশে ব'সে, এভারেস্টের গায়ে ফিতে না লাগিয়ে, চূড়োয় চড়তে গিয়ে খামখা জান না দিয়ে ইংরেজকে বাৎলে দেয়নি, ঐ দুনিয়ার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়?
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
প্রেমের সঙ্গে সূর্যেরই শুধু তুলনা হয়। আকাশ আর মুখ এক। ঘড়ি ঘড়ি রঙ বদলায়। সূর্য চিরন্তন। প্রেম-সূর্য একবার দেখা দিলে আর কোনো ভাবনা নেই। 
Syed Mujtaba Ali (শবনম)
আমি আর কি করি। বললুম, 'হবে, হবে। সব হবে। কিন্তু টাগোর সাহেবের কোন্‌ কবিতা আপনার বিশেষ পছন্দ হয়?' আহমদ আলী একটু ভেবে বললেন, 'আয় মাদর, শাহজাদা ইমরোজ-' বুঝলুম, এ হচ্ছে, 'ওগো মা, রাজার দুলাল যাবে আজি মোর-
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
এই এতদিনে বুঝতে পারলুম কালিদাস কোন দুঃখে বলেছিলেন, 'হে সৌভাগ্যবান মুক্তা, তুমি একবার মাত্র লৌহশলাকায় বিদ্ধ হয়ে তারপর থেকেই প্রিয়ার বক্ষ-দেশে বিরাজ করছ; আমি মন্দভাগ্য শতবার বিরহশলাকায় সছিদ্র হয়েও সেখানে স্থান পাই নে।
Syed Mujtaba Ali (শবনম)
শস্ত্রে সব পাওয়া যায় - কোন কিচ্ছুর অনটন নেই। সম্পত্তি বিলিয়ে দিতে চান, না বিলিয়ে দিতে চান; পূজো করতে চান, না করতে চান - একখানা কিংবা বিশখানা; পূজো-পাজা করতে চান, কিংবা ব্যোম ভোলানাথ বলে বুঁদ হয়ে থাকতে চান, এমন কি মরার পর পরশুরামী স্বর্গে গিয়ে অপ্সরাদের সঙ্গে দুদণ্ড রসালাপ করতে চান কিংবা রবি ঠাকুরী 'কোণের প্রদীপ মিলায় যথা জ্যোতিঃ সমুদ্রেই' হয়ে গিয়ে নির্গুণ নিরবাণানন্দ লাভ করতে চান, তাবৎ মালই পাবেন। ...শুধু হিন্দুশাস্ত্র না; ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলিম সব শাস্ত্রেরই ঐ গতি। শুধু হিন্দুশাস্ত্র এঁদের তুলনায় অনেক বেশি বনেদী বলে এঁর বাড়িতে দালানকোঠার গোলকধাঁধা ওঁদের তুলনায় অনেক বেশি, পথ হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা পদে পদে। তাতে অবশ্য বিচলিত হওয়ার মত কিছুই নেই, কারণ স্বয়ং যীশুখ্রীষ্ট নাকি বলেছেন, যেহোভার আপন বাড়িতে দালান-কোঠা বিস্তর। তাই শাস্ত্রের উপর আমার অগাধ শ্রদ্ধা। আর তাতে ফয়দাও এন্তার।
Syed Mujtaba Ali (রচনাবলী – ১)
এই তালতলারই আমার এক দার্শনিক বন্ধু একদিন বলেছিলেন যে, এমেটিন ইনজেকশন নিলে মানুষ নাকি হঠাৎ অত্যন্ত স্যাঁৎসেঁতে হয়ে যায়, ইংরিজীতে যাকে বলে 'মডলিন'- তখন নাকি পাশের বাড়ির বিড়াল মারা গেলে মানুষ বালিশে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। বিদেশে যাওয়া আর এমেটিন ইনজেকশন নেওয়া প্রায় একই জিনিস।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
...যখনই কোনো জাতি বৈদেশিক কোন ভিন্নধর্মাবলম্বীদ্বারা পরাজিত হয় তখন নূতন রাজা এঁদের পণ্ডিতমণ্ডলীকে কোনো প্রধানকর্মে আমন্ত্রণ জানান না বলে এঁদের এক মানসিক পরিবর্তন হয়। এঁদের চিন্তাধারা তখন মোটামুটি এই: "আমাদের ধর্ম সত্য, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আমরা ম্লেচ্ছ বা যবন কর্তৃক পরাজিত হলুম কেন? এর একমাত্র কারণ এই হতে পারে যে, আমার আমাদের ধর্মের প্রকৃতরূপ বুঝতে পারিনি। ধর্মের অর্থকরণে (ইন্টারপ্রিটেশনে) নিশ্চয়ই আমাদের ভুল রয়ে গিয়েছে। আমরা তাহলে নূতন করে ব্যাখ্যা করে দেখি, ত্রুটি কোন স্থলে হয়েছে।" ফলে পরাজয়ের পরবর্তী যুগে তাবৎ সৃষ্টিশক্তি টীকাটীপ্পনী রচনায় ব্যয় হয়।
Syed Mujtaba Ali (বড়বাবু)
সায়েব যেমন যেমন তার সব খাবার বের করতে লাগল আমার চোখ দুটো সঙ্গে সঙ্গে জমে যেতে লাগল। সেই শিককাবাব, সেই ঢাকাই পরোটা, মুরগী মুসল্লম, আলু-গোস্ত। আমিও তাই নিয়ে এসেছি জাকারিয়া স্ট্রীট থেকে। এবার সায়েবের চক্ষুস্থির হওয়ার পালা। ফিরিস্তি মিলিয়ে একই মাল বেরতে লাগল। এমন কি শিককাবাবের জায়গায় শামীকাবাব নয়, আলু-গোস্তের বদলে কপি-গোস্ত পর্যন্ত নয়। আমি বললুম, 'ব্রাদার, আমার ফিঁয়াসে নেই, এসব জাকারিয়া স্ট্রীট থেকে কেনা।' একদম হুবহু একই স্বাদ। সায়েব খায় আর আনমনে বাইরের দিকে তাকায়। আমারও আবছা আবছা মনে পড়ল, যখন সওদা করছিলুম তখন যেন এক গাব্দাগোব্দা ফিরিঙ্গী মেমকে হোটেলে যা পাওয়া যায় তাই কিনতে দেখেছি। ফিরিঙ্গীকে বলতে যাচ্ছিলুম তার ফিঁয়াসের একটা বর্ণনা দিতে কিন্তু থেমে গেলুম। কি আর হবে বেচারির সন্দেহ বাড়িয়ে- তার উপর দেখি বোতল থেকে কড়া গন্ধের কি একটা ঢকঢক করে মাঝে মাঝে গিলছে।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
ভ্রমণকাহিনী লিখতে লিখতে মানুষ আশকথা পাশকথা উত্থাপন করে। গুণীরা বলেন এটা কিছু দুষ্কর্ম নয়। সদররাস্তা ছেড়ে পথিক যদি পথ ভুলে আশপথ পাশপথ না যায় তবে অচেনা ফুলের নয়া নয়া পাখির সাথে তার পরিচয় হবে কী প্রকারে?
Syed Mujtaba Ali (মুসাফির)
ভেবে-চিন্তে অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করে বই কেনে সংসারী লোক। পাঁড় পাঠক বই কেনে প্রথমে দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে, তারপর চেখে চেখে সুখ করে করে, এবং সর্বশেষে সে কেনে ক্ষ্যাপার মত, এবং চুর হয়ে থাকে মধ্যিখানে। এই একমাত্র ব্যসন, একমাত্র নেশা যার দরুন সকালবেলা চোখের সামনে সারে সারে গোলাপি হাতি দেখতে হয় না, লিভার পচে পটল তুলতে হয় না। ― Syed Mujtaba Ali
Sayed Mujtaba Ali
কোনো দেশ জয় করা এক কর্ম, সে দেশ শাসন করা সম্পূর্ণ ভিন্ন শিরঃপীড়া। বাদশা ইরান-তুরান থেকে দিগ্বিজয় করার সময় রাজকর্মচারী সঙ্গে আনেন নি। আর আনবেনই বা কি ? তারা এ-দেশের ভাষা জানে না, রাজস্বব্যবস্থা বোঝে না, কোন দণ্ডনীতি কঠোর আর কোনটাই বা অতি সদয় বলে দেশের লোকের মনে হবে—এ সম্বন্ধে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। বখশী ( চীফ পে-মাস্টার, অ্যাকাউন্টেনট-কম-অডিটার জেনারেল ), কানুনগো ( লিগেল রিমেমব্রেনসার), সরকার ( চীফ সেক্রেটারি), মুনশী (হুজুরের ফরমান লিখনেওলা, নূতন আইন নির্মাণের খসড়া প্ৰস্তুতকারী), ওয়াকে’-নওয়ীস ( যার থেকে Waqnis), পর্চানওয়ীস ( রাজকর্মচারীর আচরণ তথা দেশের জনসাধারণ সম্বন্ধে রিপোর্ট তৈরী করনেওলা ) এসব গুরুত্বপূর্ণ পদ গ্ৰহণ করবে। কারা ? আমরা জানি, কায়স্থর স্মরণাতীত কাল থেকে এসব কাজ করে। আসছেন। এরাই এগিয়ে এলেন। মুসলমানপ্ৰাধান্য প্ৰায় দুশ বৎসর হল লোপ পেয়েছে, কিন্তু আজও এসব পদবী-প্ৰধানতঃ কায়স্থদের ভিতর-সম্পূর্ণ লোপ পায় নি।
Syed Mujtaba Ali (বড়বাবু)
আসলে আমি বুঝতে পারতুম না, কর্তারা, দাদারা এমন কি মা পর্যন্ত অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিলেন, আমার ভাইটি বাঁচবে না। তাঁরা আমাকে সে খবরটি দিতে চাননি। আমার জন্মের পূর্বে আমার এক দাদা আর দিদিও ঐ ব্যামােতে যায়। ডাক্তার-কবরেজরাও আমার দিকে এমন ভাবে তাকাতেন যে তার অর্থটা আজ আমার কাছে পরিষ্কার—তখন বুঝতে পারিনি। তবু তাদের এই চৌদ্দ বছরের ছেলেটির প্রতি দরদ ছিল বলে আসতেন, নাড়ী টিপতেন, ওষুধ দিতেন। ঐ দুই বছরের ভাইটি কিন্তু আমাকে চিনত সবচেয়ে বেশী -- কি করে বলতে পারবাে না। আমাকে দেখা মাত্রই তার রােগজীৰ্ণ শুকনাে মুখে ফুটে উঠতে ম্লান হাসি। সে হাসি একদিন আর রইল না। আমাকে সে ডরাতে আরম্ভ করলাে। আমাকে দেখলেই মাকে সে আঁকড়ে ধরে রইত। আমার কোলে আসতে চাইতাে না। আমার দোষ, আমি কবরেজের আদেশ মত তার নাক টিপে, তাকে জোর করে তেতাে ওষুধ খাইয়েছিলুম। ঐ ভয় নিয়েই সে ওপারে চলে যায়। তার সেই ভীত মুখের ছবি আমি বয়ে বেড়াচ্ছি, বাকি জীবন ধরে।
Syed Mujtaba Ali (বড়বাবু)
ইনসাফের (ন্যায়ধর্মের) কথা তুললেন, হুজুর, এ-দুনিয়ায় ইনসাফ কোথায়? আর বে-ইনসাফি তো তারাই করেছে বেশী, যাদের খুদা ধনদৌলত দিয়েছেন বিস্তর৷
Syed Mujtaba Ali (সৈয়দ মুজতবা আলীর শ্রেষ্ঠ গল্প)
নীরবতা' যে শুধুমাত্র 'হিরণ্ময়' তাই নয়, সরব প্রশ্নকে নিধন করার মরণাস্ত্রও বটে। - প্রটোকল
Syed Mujtaba Ali (রচনাবলী – ৩)
বল দেখি, মেয়েরা অনেকক্ষণ ধরে চুমো খেতে পারে না কেন? কি করে বলবো বল? দু মিনিট মুখ বন্ধ করে থাকতে পারে না বলে। কথা কইতে ইচ্ছে যায়।
Syed Mujtaba Ali (শবনম)
মজনু যখনই শুনত, তার প্রিয়া লায়লিকে নজদ্‌ মরুভূমির উপর দিয়ে উটে করে সরানো হচ্ছে সে তখন পাগলের মত এ উট সে-উটের কাছে গিয়ে খুঁজত কোন মহমিলে (উটের হাওদা) লায়লি আছে। মজনু মরে গেছেন কত শতাব্দী হল। কিন্তু এখনো তার জীবিতাবস্থার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস মরুভূমির ছোট ছোট ঘূর্ণিবায়ু হয়ে লায়লির মহমিল খুঁজছে। তুমি বুঝি কখনো মরুভূমি দেখো নি? ছোট ছোট ঘূর্ণিবায়ু অল্প অল্প ধূলি উড়িয়ে এদিকে ধায়, ওদিকে ধায়, ওদিকে ছোটে, সেদিকে খোঁজে।
Syed Mujtaba Ali (শবনম)
ডিমোক্রেসি বড় ঠুনকো জিনিস; কখন যে কার অভিসম্পাতে ফেটে চৌচির হয়ে যায়, কেউ বলতে পারে না। তারপর আর কিছুতেই জোড়া লাগে না।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
দোস্ত মুহম্মদ জিজ্ঞাসা করলেন, রাইফেলের জন্য তারা লড়েছিল? আমি বললুম, না, সুন্দরীর জন্য। দোস্ত মুহম্মদ বললেন, তওবা! তওবা! স্ত্রীলোকের জন্য কখনো জব্বর লড়াই হয়? মোক্ষম লড়াই হয় রাইফেলের জন্য। রাইফেল থাকলে সুন্দরীর স্বামীকে খুন করে তার বিধবাকে বিয়ে করা যায়। উত্তম বন্দোবস্ত। সে বেহেস্তে গিয়ে হুরী পেল তুমিও সুন্দরী পেলে।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
অফিসারটি শিক্ষিত লোক। একলা পড়েছেন, কথা কইবার লোক নেই। আমাকে পেয়ে নির্জনে জমানো তার চিন্তাধারা যেন উপছে পড়ল। হাফিজ-সাদীর অনেক বয়েৎ আওড়ালেন এবং মরুপ্রান্তরে একা একা আপন মনে সেগুলো থেকে নিংড়ে নিংড়ে যে রস বের করেছেন তার খানিকটা আমায় পরিবেষণ করলেন। আমি আমার ভাঙা ভাঙা ফারসীতে জিজ্ঞাসা করলুম, সঙ্গীহীন জীবন কি কঠিন বোধ হয় না? বললেন, আমার চাকরী পল্টনের, ইস্তফা দেবার উপায় নেই। কাজেই বাইরের কাবুল নদীটি নিয়ে পড়ে আছি। রোজ সন্ধ্যায় তার পাড়ে গিয়ে বসি আর ভাবি যেন একমাত্র নিতান্ত আমার জন্য সে এই দুর্গের দেয়ালে আঁচল বুলিয়ে চলে গিয়েছে। অন্যায় কথাও নয়। আর দুচারজন যারা নদীর পারে যায়, তাদের মতলব ঠাণ্ডা হওয়ার। আমিও ঠাণ্ডা হই, কিন্তু শীতকালেও কামাই দিইনে। গোড়ার দিকে আমিও স্বার্থপর ছিলুম, কাবুল নদী আমার কাছে সৌন্দর্য উপভোগের বস্তু ছিল। তার গান শুনতুম, তার নাচ দেখতুম, তার লুটিয়ে-পড়া সবুজ আঁচলের এক প্রান্তে আসন পেতে বসতুম। এখন আমাদের অন্য সম্পর্ক। আচ্ছা বলুন তো, অমাবস্যার অন্ধকারে যখন কিছুই দেখা যায় না, তখন আপনি কখনো নদীর পারে কান পেতে শুয়েছেন? আমি বললুম, নৌকোতে শুয়ে অনেক রাত কাটিয়েছি। তিনি উৎসাহের সঙ্গে বললেন, তা হলে আপনি বুঝতে পারবেন। মনে হয় না কুলকুল শুনে, যেন আর দুদিন কাটলেই আরেকটু, আর সামান্য একটু অভ্যাস হয়ে গেলেই হঠাৎ কখন এই রহস্যময়ী ভাষার অর্থ সরল হয়ে যাবে। আপনি ভাবছেন আমি কবিত্ব করছি। আদপেই না। আমার মনে হয় মেঘের ডাক। যেমন জনপ্রাণীকে বিদ্যুতের ভয় জানিয়ে দেয়, জলের ভাষাও তেমনি কোনো এক আশার বাণী জানাতে চায়। দূর সিন্ধুপার থেকে সে বাণী উজিয়ে উজিয়ে এসেছে, না কাবুল পাহাড়ের শিখর থেকে বরফের বুকের ভিতর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে এখানে এসে গান গেয়ে জেগে উঠেছে, জানিনে।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
দক্কার পাশের সেই কাবুল নদীর কৃপায় এই জলালাবাদ শস্যশস্পশ্যামল। এখানে জমি বোধ হয় দক্কার মত পাথরে ভর্তি নয় বলে উপত্যকা রীতিমত চওড়া একটু নিচু জমিতে বাস নামার পর আর তার প্রসারের আন্দাজ করা যায় না। তখন দুদিকেই সবুজ, আর লোকজনের ঘরবাড়ি। সামান্য একটি নদী ক্ষুদ্রতম সুযোগ পেলে যে কি মোহন সবুজের লীলাখেলা দেখাতে পারে জলালাবাদে তার অতি মধুর তসবির। এমনকি যে দুটো-চারটে পাঠান রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তাদের চেহারাও যেন সীমান্তের পাঠানের চেয়ে মোলায়েম বলে মনে হল। লক্ষ্য করলুম, যে পাঠান শহরে গিয়ে সেখানকার মেয়েদের বেপর্দামির নিন্দা করে তারি বউ-ঝি ক্ষেতে কাজ করছে অন্য দেশের মেয়েদেরই মত। মুখ তুলে বাসের দিকে তাকাতেও তাদের আপত্তি নেই। বেতারকর্তাকে জিজ্ঞাসা করতে তিনি গভীরভাবে বললেন, আমার যতদূর জানা, কোনো দেশের গরীব মেয়েই পদ মানে না, অন্ততঃ আপন গাঁয়ে মানে না। শহরে গিয়ে মধ্যবিত্তের অনুকরণে কখনো পর্দা মেনে ভদ্রলোক হবার চেষ্টা করে, কখনো কাজ-কর্মের অসুবিধা হয় বলে গাঁয়ের রেওয়াজই বজায় রাখে। আমি জিজ্ঞাসা করলুম, আরবের বেদুইন মেয়েরা? তিনি বললেন, আমি ইরাকে তাদের বিনা পর্দায় ছাগল চরাতে দেখেছি।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
যদি বলা হয় আফগানরা মুসলমান হয়ে গেল বলে তাদের অন্য ইতিহাস তাহলে বলি, তারা একদিন অগ্নিউপাসনা করেছিল, গ্রীক দেবদেবীর পূজা করেছিল, বেদবিরোধী বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিল। তবুও যখন দুই দেশের ইতিহাস পৃথক করা যায় না, তখন তাদের মুসলমান হওয়াতেই হঠাৎ কোন্ মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল? বুদ্ধের শরণ নিয়ে কাবুলী যখন মগধবাসী হয়নি তখন ইসলাম গ্রহণ করে সে আরবও হয়ে যায়নি। ভারতবর্ষের ইতিহাস থেকে মুসলিম আফগানিস্তান বিশেষ করে কান্দাহার, গজনী, কাবুল, জলালাবাদ— বাদ দিলে ফ্রন্টিয়ার, বানু, কোহাট এমন কি পাঞ্জাবও বাদ দিতে হয়।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
বেইমান বললে পাঠানের রক্ত খাইবার পাসের টেম্পারেচার ছাড়িয়ে যায়, আর ভাইকে বাঁচাবার জন্য সে অত্যন্ত শান্তমনে যোগাসনে বসে আঙুল গোণে, নিদেনপক্ষে তাকে কটা খুন করতে হবে। কিন্তু হিসেবনিকেশে সাক্ষাৎ বিদ্যেসাগর বলে প্রায়ই ভুল হয় আর দুটো-চারটে লোক বেঘোরে প্রাণ দেয়। তাই নিয়ে তন্বীতম্ব করলে পাঠান সকাতর নিবেদন করে, কিন্তু আমার যে চার-চারটে বুলেটের বাজে খরচা হল তার কি? তাদের গুষ্ঠি-কুটুম কান্নাকাটি করছে, কিন্তু একজনও একবারের তরে আমার বাজে খরচার খেসারতির কথা ভাবছে না। ইনসান বড়ই খুদপরস্ত— সংসার বড়ই স্বার্থপর।
Syed Mujtaba Ali
কিন্তু টাগোর সাহেবের কোন্ কবিতা আপনার বিশেষ পছন্দ হয়? আহমদ আলী একটু ভেবে বললেন, আয় মাদর, শাহজাদা ইমরোজ— বুঝলুম, এ হচ্ছে, ওগো মা, রাজার দুলাল যাবে আজি মোর— বললুম, সে কি কথা, খান সাহেব? এ কবিতা তো আপনার ভালো লাগার কথা নয়। আপনারা পাঠান, আপনারা প্রেমে জখম হলে তো বাঘের মত রুখে দাঁড়াবেন। ঘোড়া চড়ে আসবেন বিদ্যুৎগতিতে, প্রিয়াকে একটানে তুলে নিয়ে কোলে বসিয়ে চলে যাবেন দূরদূরান্তরে। সেখানে পর্বতগুহায় নির্জনে আরম্ভ হবে প্রথম মানঅভিমানের পালা, আপনি মাথা পেতে দেবেন তার পায়ের মখমলের চটির নিচে– আমাকেই থামতে হল কারণ আহমদ আলী অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির লোক, কারো কথা মাঝখানে কাটেন না। আমি আটকে গেলে পর বললেন, থামলেন কেন, বলুন। আমি বললুম, আপনারা কোন্ দুঃখে ইনিয়ে বিনিয়ে কাদবেন ম্যা ম্যা, মা মা করে। আহমদ আলী বললেন, হু, এক জর্মন দার্শনিকও নাকি বলেছেন স্ত্রীলোকের কাছে যেতে হলে চাবুকটি নিয়ে যেতে ভুলে না।। আমি বললুম, তওবা তওবা, অত বাড়াবাড়ির কথা হচ্ছে না। আহমদ আলী বললেন, না, দাদা, প্রেমের ব্যাপারে হয় ইপার না হয় উপার। প্রেম হচ্ছে শহরের বড় রাস্তা, বিস্তর লোজন। সেখানে গোল্ডন মীন বা সোনালী মাঝারি বলে কোনো উপায় নেই। হয় কীপ টু দি রাইট অর্থাৎ ম্যা ম্যা করে হৃদয়বেদন নিবেদন, না হয়, লেফট অর্থাৎ বজ্রমুষ্টি দিয়ে নীটশে যা বলেছেন। কিন্তু থাক্ না এসব কথা। বুঝলুম প্রেমের ব্যাপারে পাঠান নীরব কর্মী। আমরা বাঙালী, দুপুররাত্রে পাড়ার লোককে না জাগিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রেমালাপ করতে পারিনে। আমার অবস্থাটা বুঝতে পেরে আমাকে যেন খুশী করার জন্য আহমদ আলী বললেন, পেশাওয়ারের বাজারে কিন্তু কোনো গানেওয়ালী নাচনেওয়ালী ছমাসের বেশী টিকতে পারে না। কোনো ছোকরা পাঠান প্রেমে পড়বেই। তারপর বিয়ে করে। আপন গায়ে নিয়ে সংসার পাতে। সমাজ আপত্তি করে না? মেয়েটা দুদিন বাদে শহরের জন্য কান্নাকাটি করে না? সমাজ আপত্তি করবে কেন? ইসলামে তো কোনো মানা নেই। তবে দুদিন বাদে কান্নাকাটি করে কি না বলা কঠিন। পাঠান গাঁয়ের কান্না, শহরে এসে পৌঁছবে এত জোর গলা ইনজানেরও নেই। জানকী বাঈয়ের থাকলে আমাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান হতে হত না। হলপ করে কিছু বলতে পারব না, তবে আমার নিজের বিশ্বাস, বেশীর ভাগ মেয়েই বাজারের হট্টগোলের চেয়ে গ্রামের শান্তিই পছন্দ করে। তার উপর যদি ভালোবাসা পায়, তা হলে তো আর কথাই নেই
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
বাঙালী বোমা মারে কেন মারে খোদায় মালুম, রাইফেলে তো তার শখ নেই— ইংরেজ বোমা খেতে পছন্দ করে না কিন্তু বাঙালীর গোঁ সে খাওয়াবেই। তার জন্য সে জান দিতে কবুল, নিতেও কবুল। আমি কেন ইংরেজকে আপনার হাড়হদ্দের খবর দেব? জান লেনদেনের ব্যাপারে তৃতীয় পক্ষের দূরে থাকা উচিত। আমি বললুম, হক কথা বলেছেন। রাসেলেরও ঐ মত। ভ্যালুজ নিয়ে নাকি তর্ক হয় না। ইংরেজ পাঠানে বিস্তর মিল দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু বাঙালী কেন বোমা মারে সে তো অত্যন্ত সোজা প্রশ্ন। স্বাধীনতার জন্য। স্বাধীনতা পেয়ে গেলে সেটা বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাইফেলের প্রয়োজন হয়। তাই বোধ করি স্বাধীন আফ্রিদীর কাছে রাইফেল এত প্রিয়বস্তু। আহমদ আলী অনেকক্ষণ আপন মনে কি যেন ভাবলেন। বললেন, কি জানি, স্বাধীনতা কিসের জোরে টিকে থাকে? রাইফেলের জোরে না বুকের জোরে।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)