Syed Mujtaba Ali Quotes

We've searched our database for all the quotes and captions related to Syed Mujtaba Ali. Here they are! All 49 of them:

ইউরোপে cold blooded খুন হয়, ভারতবর্ষে কোল্ড-ব্লাডেড্ বিয়ে হয়।
Syed Mujtaba Ali (চাচা কাহিনী)
যে ব্যামোর দেখবেন সাতান্ন রকমের ওষুধ, বুঝে নেবেন, সে ব্যামো ওষুধে সারে না।
Syed Mujtaba Ali (চাচা কাহিনী)
ভেবে-চিন্তে অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করে বই কেনে সংসারী লোক। পাঁড় পাঠক বই কেনে প্রথমে দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে, তারপর চেখে চেখে সুখ করে করে, এবং সর্বশেষে সে কেনে ক্ষ্যাপার মত, এবং চুর হয়ে থাকে মধ্যিখানে। এই একমাত্র ব্যসন, একমাত্র নেশা যার দরুন সকালবেলা চোখের সামনে সারে সারে গোলাপি হাতি দেখতে হয় না, লিভার পচে পটল তুলতে হয় না।
Syed Mujtaba Ali
পৃথিবীর আর সব সভ্য জাত যতই চোখের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত, আমরা ততই আরব্য-উপন্যাসের এক-চোখা দৈত্যের মতো ঘোঁৎ ঘোঁৎ করি আর চোখ বাড়াবার কথা তুললেই চোখ রাঙাই। চোখ বাড়াবার পন্থাটা কী? প্রথমত : বই পড়া এবং তার জন্য দরকার বই কেনার প্রবৃত্তি।
Syed Mujtaba Ali
কিন্তু বাঙালি আর কিছু পারুক না পারুক,বাজে তর্কে খুব মজবুত ।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
আইন মানুষকে এক পাপের জন্য সাজা দেয় একবার, সমাজ কতবার, কত বৎসর ধরে দেয় তার সন্ধান কোনো কেতাবে লেখা নেই, কোনো বৃহস্পতিও জানেন না।
Syed Mujtaba Ali
বহুদিন ধরে সাবান ছিল না বলে আবদুর রহমানের পাগড়ী ময়লা। কিন্তু আমার মনে হল চতুর্দিকের বরফের চেয়ে শুভ্রতর আবদুর রহমানের পাগড়ী, আর শুভ্রতম আবদুর রহমানের হৃদয়!
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
কিন্তু বই কিনে কেউ তো কখনো দেউলে হয়নি।
Syed Mujtaba Ali
যে ডাক্তার যত বড় তার হাতের লেখা তত খারাপ
Syed Mujtaba Ali
মানুষের ভক্তি যতই গভীর হোক, সেটা অতল নয়-গভীরতম মহা-সমুদ্রেরও তল আছে।
Syed Mujtaba Ali (হিটলার)
আমার চাকরের নাম কাট্টু, কেননা সে পকেট কাটে, মাছের মাথা কাটে, আর প্রয়োজন হলে মনিবের মাথা কাটে।
Syed Mujtaba Ali
সেনসর বোর্ড ফোর্ড ও তখন শিশু, এখনকার মত জ্যাঠা হয়ে উঠেনি, কাজেই হরেক রুচির ফিল্ম তখন এদেশে অক্লেশে আসত এবং আমরা সেগুলো গোগ্রাসে গিলতুম, তার ফলে আমাদের চরিত্র সর্বোনাশ হয়েছে সে কথা কেউ কখনো বলেনি এবং আজ যে সেন্সর বোর্ডের এত কড়াকড়ি, তার ফলে এ যুগের চ্যাংড়া চিংড়িরা যীশুখেস্ট কিংবা রামকেষ্ট হয়ে গিয়েছে এ মস্করাও কেউ করেনি
Syed Mujtaba Ali (চতুরঙ্গ)
আমি এ জীবনে তিনখানা হিন্দি ছবিও দেখিনি এবং অন্য কোন পাপ করিনি বলে এই পূণ্যের জোরেই স্বর্গে যাবো বলে আশা রাখি। তবে বলা যায়না, সেখানে হয়তো হিন্দী ছবি-ই দেখতে হবে। যদি প্রশ্ন শোধান, সে কি করে হয়? – তুমি হিন্দী ফিলিম বর্জন করার পূণ্যে স্বর্গে গেলে, সেখানে আবার তোমাকে ঐ ‘মাল’ই দেখতে হবে কেন? তবে উত্তরে নিবেদন, কামিনীকাঞ্চনসুরা বর্জন করার জন্য আপনি যখন স্বর্গে যাবেন তখন কি ইন্দ্রসভায় ঐ গুলোরই ছড়াছড়ি দেখতে পাবেননা?
Syed Mujtaba Ali (চতুরঙ্গ)
সরল হৃদয় মনে করে প্রেম লুকায়ে রাখিতে পারে কাঁচের ফানুস মনে ভাবে লুকায়েছে শিখাটারে।।
Syed Mujtaba Ali (শব্‌নম্‌)
জর্মন ভাষাতেই প্রবাদ আছে, ওষুধ খেলে সর্দি সারে সাত দিনে, না খেলে এক সপ্তায়।
Syed Mujtaba Ali (চাচা কাহিনী)
শত্রুর মিলনে মনে অতি কষ্ট হয় বন্ধুর বিচ্ছেদে কষ্ট হয় সাতিশয়। উভয়েই বহু কষ্ট দেয় যদি মনে শত্রু মিত্রে কিবা ভেদ তবে এ ভুবনে?
Syed Mujtaba Ali (শব্‌নম্‌)
কে বল সহজ, ফাঁকা যাহা তারে, কাঁধেতে বহিতে যাওয়া। জীবন যতই ফাঁকা হয়ে যায়, ততই কঠিন বওয়া।
Syed Mujtaba Ali (শব্‌নম্‌)
ডাক্তার উৎসাহিত হয়ে আরো কি যেন বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় আস্তে আস্তে দরজা খুলে ঘরে ঢুকলেন এক সুন্দরী- হ্যাঁ, সুন্দরী বটে। এক লহমায় আমি নর্থ সীর ঘন নীল জল, দক্ষিণ ইটালির সোনালি রোদে রূপালি প্রজাপতি, ডানয়ুবের শান্ত-প্রশান্ত ছবি, সেই ডানয়ুবেরই লজ্জাশীল দেহচ্ছন্দ, রাইনল্যান্ডের শ্যামলিয়া মোহনীয়া ইন্দ্রজাল সব কিছুই দেখতে পেলুম। আর সে কী লাজুক হাসি হেসে আমার দিকে তিনি হাত বাড়ালেন। আমি মাথা নীচু করে ফরাসিস কায়দায় তাঁর চম্পক করাঙ্গুলিপ্রান্তে ওষ্ঠ স্পর্শ করে মনে মনে বললুম, বেঁচে থাকো সর্দি-কাশি চিরজীবী হয়ে তুমি।
Syed Mujtaba Ali (চাচা কাহিনী)
আমার বিরহে তুমি অভ্যস্ত হয়ে যেওনা। আমার ওটুকুতেই চলবে।
Syed Mujtaba Ali (শব্‌নম্‌)
রাজসভাতে এসেছিলাম বসতে দিলে পিছে, সাগর জলে ময়লা ভাসে, মুক্তো থাকে নিচে।
Syed Mujtaba Ali (শব্‌নম্‌)
হাজার যোজন নিচে নামিয়া আকাশের ঐ তারা গোস্পদে হ'ল প্রতিবিম্বিত ; তাই হল মানহারা?
Syed Mujtaba Ali (শব্‌নম্‌)
তুমি বলেছিলে 'ভাবনা কিসের? আমি তোমারেই ভালোবাসি; আনন্দে থাকো, ধৈর্য-সলিলে ভাবনা সে যাক ভাসি।' ধৈর্য কোথায়? কিবা সে হৃদয়? হৃদয় কাহারে কয়? সে তো শুধু এক বিন্দু শোণিত আর ফরিয়াদ-রাশি।।
Syed Mujtaba Ali (শব্‌নম্‌)
বোরকা পরে, ঐ যা। তা না হলে পাঠান মেয়েও স্বাধীন।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
দোস্ত! তুমহারী রোটি, হমারা গোস্ত!
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
প্রেম গোপন রাখাতে যে গভীর আনন্দ আছে তার থেকে আমি তাকে বঞ্চিত করতে যাব কেন? শুনেছি প্রথম গর্ভধারণ করে বহু মাতা সেটা যত দিন পারে গোপন রাখে। নিভৃতে আপন মনে সেই ক্ষুদ্র শিশুটির কথা ধ্যান করতে করতে সে চলে যায় স্বর্গলোকপানে, যেখান থেকে মুখে হাসি নিয়ে নেমে আসবে এই শিশুটি। 
Syed Mujtaba Ali (শব্‌নম্‌)
সর্দারজী হেসে বললেন, 'কিছু ভয় নেই, পেশাওয়াৱ স্টেশনে এক গাড়ি বাঙালী নামে না, আপনি দু'মিনিট সবুর করলেই তিনি আপনাকে ঠিক খুঁজে নেবেন।' আমি সাহস পেয়ে বললুম, 'তা তাে বটেই তবে কিনা শৰ্ট পরে এসেছি ---' সর্দারজী এবার অট্টহাস্য করে বললেন, ‘শর্টে যে এক ফুট জায়গা ঢাকা পড়ে তাই দিয়ে মানুষকে চেনে নাকি?
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
আকাশের জল আর চোখের জল একই কারণে ঝরে না
Syed Mujtaba Ali (শব্‌নম্‌)
খুদাবখ্‌শ আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন আমি বদ্ধ উন্মাদ। কিন্তু মুখে কথা ফুটল। বললেন, 'আপনি পর্যন্ত এই কথা বললেন? ছেলে মরেছিল তো কি? আবার ছেলে হবে। বিবি মরেছেন তো কি? নূতন শাদী করব। কিন্তু ভাই পাব কোথায়?' তারপর আবার হাউহাউ করে কাঁদেন আর বলেন, 'আমার ভাই মরে গিয়েছে।' অধ্যাপক বলা শেষ করলে আমি বললুম, 'লক্ষ্মণের মৃত্যুশোকে রামচন্দ্রও ঐ বিলাপ করেছিলেন।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
ভাষাতত্ত্ব নিয়ে আমার মনে তখন আরও একটা খটকা লাগল ৷ রেডিয়ােওয়ালার চোস্ত ফার্সী জানার কথা। তাকে জিজ্ঞাসা করলুম, ‘ঐ যে সরাইওয়ালা বলল, ‘মাল-জানের’ তদারকি আপন আপন কাঁধে এ কথাটা আমার কানে কেমনতরো নূতন ঠেকলো। সমাসটা কি ‘জান-মাল’ নয়?’ অন্ধকারে রেডিয়োওয়ালার মুখ দেখা যাচ্ছিল না। তাই তার কথা অনেকটা বেতারবার্তার মত কানে এসে পৌঁছল। বললেন, 'ইরানদেশের ফার্সীতে বলে, 'জান-মাল' কিন্তু আফগানিস্থানে জান সস্তা, মালের দাম ঢের বেশী৷ তাই বলে 'মাল-জান’। আমি বললুম, 'তাই বোধ করি হবে। ভারতবর্ষেও প্রাণ রেজায় সস্তা --- তাই আমরাও বলি ‘ধনে-প্রাণে’ মেরো না। ‘প্রাণে-ধনে’ মেরাে না কথাটা কখনো শুনিনি৷
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
চোখের রোশনাই নেই বলে তিনি হৃদয় দেখতে পান
Syed Mujtaba Ali (শব্‌নম্‌)
প্রেমের সঙ্গে সূর্যেরই শুধু তুলনা হয়। আকাশ আর মুখ এক। ঘড়ি ঘড়ি রঙ বদলায়। সূর্য চিরন্তন। প্রেম-সূর্য একবার দেখা দিলে আর কোনো ভাবনা নেই। 
Syed Mujtaba Ali (শব্‌নম্‌)
কাফেলা যখন পৌছালো গৃহে মরভু্ূমি হয়ে পার সবাই নীরব।উটের গলায়ও ঘন্টা বাজে না আর।
Syed Mujtaba Ali (শব্‌নম্‌)
বাঙালী আপন দেশে ব'সে, এভারেস্টের গায়ে ফিতে না লাগিয়ে, চূড়োয় চড়তে গিয়ে খামখা জান না দিয়ে ইংরেজকে বাৎলে দেয়নি, ঐ দুনিয়ার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়?
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
অমর সিং নূতন গাড়ি চালিয়ে সুখ পায় না। পদে পদে যদি টায়ার না ফাটল, এঞ্জিন না বিগড়ল, ছাতখানা উড়ে না গেল, তবে সে মোটর চালিয়ে কি কেরামতি? সে গাড়ি তো বোরকা-পরা মেয়েই চালাতে পারে।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
বলা তো যায় না, ফিরিঙ্গীর বাচ্চা- কখন রঙ বদলায়।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
আমি আর কি করি। বললুম, 'হবে, হবে। সব হবে। কিন্তু টাগোর সাহেবের কোন্‌ কবিতা আপনার বিশেষ পছন্দ হয়?' আহমদ আলী একটু ভেবে বললেন, 'আয় মাদর, শাহজাদা ইমরোজ-' বুঝলুম, এ হচ্ছে, 'ওগো মা, রাজার দুলাল যাবে আজি মোর-
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
শস্ত্রে সব পাওয়া যায় - কোন কিচ্ছুর অনটন নেই। সম্পত্তি বিলিয়ে দিতে চান, না বিলিয়ে দিতে চান; পূজো করতে চান, না করতে চান - একখানা কিংবা বিশখানা; পূজো-পাজা করতে চান, কিংবা ব্যোম ভোলানাথ বলে বুঁদ হয়ে থাকতে চান, এমন কি মরার পর পরশুরামী স্বর্গে গিয়ে অপ্সরাদের সঙ্গে দুদণ্ড রসালাপ করতে চান কিংবা রবি ঠাকুরী 'কোণের প্রদীপ মিলায় যথা জ্যোতিঃ সমুদ্রেই' হয়ে গিয়ে নির্গুণ নিরবাণানন্দ লাভ করতে চান, তাবৎ মালই পাবেন। ...শুধু হিন্দুশাস্ত্র না; ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলিম সব শাস্ত্রেরই ঐ গতি। শুধু হিন্দুশাস্ত্র এঁদের তুলনায় অনেক বেশি বনেদী বলে এঁর বাড়িতে দালানকোঠার গোলকধাঁধা ওঁদের তুলনায় অনেক বেশি, পথ হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা পদে পদে। তাতে অবশ্য বিচলিত হওয়ার মত কিছুই নেই, কারণ স্বয়ং যীশুখ্রীষ্ট নাকি বলেছেন, যেহোভার আপন বাড়িতে দালান-কোঠা বিস্তর। তাই শাস্ত্রের উপর আমার অগাধ শ্রদ্ধা। আর তাতে ফয়দাও এন্তার।
Syed Mujtaba Ali (রচনাবলী – ১)
এই তালতলারই আমার এক দার্শনিক বন্ধু একদিন বলেছিলেন যে, এমেটিন ইনজেকশন নিলে মানুষ নাকি হঠাৎ অত্যন্ত স্যাঁৎসেঁতে হয়ে যায়, ইংরিজীতে যাকে বলে 'মডলিন'- তখন নাকি পাশের বাড়ির বিড়াল মারা গেলে মানুষ বালিশে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। বিদেশে যাওয়া আর এমেটিন ইনজেকশন নেওয়া প্রায় একই জিনিস।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
...যখনই কোনো জাতি বৈদেশিক কোন ভিন্নধর্মাবলম্বীদ্বারা পরাজিত হয় তখন নূতন রাজা এঁদের পণ্ডিতমণ্ডলীকে কোনো প্রধানকর্মে আমন্ত্রণ জানান না বলে এঁদের এক মানসিক পরিবর্তন হয়। এঁদের চিন্তাধারা তখন মোটামুটি এই: "আমাদের ধর্ম সত্য, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আমরা ম্লেচ্ছ বা যবন কর্তৃক পরাজিত হলুম কেন? এর একমাত্র কারণ এই হতে পারে যে, আমার আমাদের ধর্মের প্রকৃতরূপ বুঝতে পারিনি। ধর্মের অর্থকরণে (ইন্টারপ্রিটেশনে) নিশ্চয়ই আমাদের ভুল রয়ে গিয়েছে। আমরা তাহলে নূতন করে ব্যাখ্যা করে দেখি, ত্রুটি কোন স্থলে হয়েছে।" ফলে পরাজয়ের পরবর্তী যুগে তাবৎ সৃষ্টিশক্তি টীকাটীপ্পনী রচনায় ব্যয় হয়।
Syed Mujtaba Ali (বড়বাবু)
সায়েব যেমন যেমন তার সব খাবার বের করতে লাগল আমার চোখ দুটো সঙ্গে সঙ্গে জমে যেতে লাগল। সেই শিককাবাব, সেই ঢাকাই পরোটা, মুরগী মুসল্লম, আলু-গোস্ত। আমিও তাই নিয়ে এসেছি জাকারিয়া স্ট্রীট থেকে। এবার সায়েবের চক্ষুস্থির হওয়ার পালা। ফিরিস্তি মিলিয়ে একই মাল বেরতে লাগল। এমন কি শিককাবাবের জায়গায় শামীকাবাব নয়, আলু-গোস্তের বদলে কপি-গোস্ত পর্যন্ত নয়। আমি বললুম, 'ব্রাদার, আমার ফিঁয়াসে নেই, এসব জাকারিয়া স্ট্রীট থেকে কেনা।' একদম হুবহু একই স্বাদ। সায়েব খায় আর আনমনে বাইরের দিকে তাকায়। আমারও আবছা আবছা মনে পড়ল, যখন সওদা করছিলুম তখন যেন এক গাব্দাগোব্দা ফিরিঙ্গী মেমকে হোটেলে যা পাওয়া যায় তাই কিনতে দেখেছি। ফিরিঙ্গীকে বলতে যাচ্ছিলুম তার ফিঁয়াসের একটা বর্ণনা দিতে কিন্তু থেমে গেলুম। কি আর হবে বেচারির সন্দেহ বাড়িয়ে- তার উপর দেখি বোতল থেকে কড়া গন্ধের কি একটা ঢকঢক করে মাঝে মাঝে গিলছে।
Syed Mujtaba Ali (দেশে বিদেশে)
নীরবতা' যে শুধুমাত্র 'হিরণ্ময়' তাই নয়, সরব প্রশ্নকে নিধন করার মরণাস্ত্রও বটে। - প্রটোকল
Syed Mujtaba Ali (রচনাবলী – ৩)
বল দেখি, মেয়েরা অনেকক্ষণ ধরে চুমো খেতে পারে না কেন? কি করে বলবো বল? দু মিনিট মুখ বন্ধ করে থাকতে পারে না বলে। কথা কইতে ইচ্ছে যায়।
Syed Mujtaba Ali (শব্‌নম্‌)
মজনু যখনই শুনত, তার প্রিয়া লায়লিকে নজদ্‌ মরুভূমির উপর দিয়ে উটে করে সরানো হচ্ছে সে তখন পাগলের মত এ উট সে-উটের কাছে গিয়ে খুঁজত কোন মহমিলে (উটের হাওদা) লায়লি আছে। মজনু মরে গেছেন কত শতাব্দী হল। কিন্তু এখনো তার জীবিতাবস্থার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস মরুভূমির ছোট ছোট ঘূর্ণিবায়ু হয়ে লায়লির মহমিল খুঁজছে। তুমি বুঝি কখনো মরুভূমি দেখো নি? ছোট ছোট ঘূর্ণিবায়ু অল্প অল্প ধূলি উড়িয়ে এদিকে ধায়, ওদিকে ধায়, ওদিকে ছোটে, সেদিকে খোঁজে।
Syed Mujtaba Ali (শব্‌নম্‌)
এই এতদিনে বুঝতে পারলুম কালিদাস কোন দুঃখে বলেছিলেন, 'হে সৌভাগ্যবান মুক্তা, তুমি একবার মাত্র লৌহশলাকায় বিদ্ধ হয়ে তারপর থেকেই প্রিয়ার বক্ষ-দেশে বিরাজ করছ; আমি মন্দভাগ্য শতবার বিরহশলাকায় সছিদ্র হয়েও সেখানে স্থান পাই নে।
Syed Mujtaba Ali (শব্‌নম্‌)
কোনো দেশ জয় করা এক কর্ম, সে দেশ শাসন করা সম্পূর্ণ ভিন্ন শিরঃপীড়া। বাদশা ইরান-তুরান থেকে দিগ্বিজয় করার সময় রাজকর্মচারী সঙ্গে আনেন নি। আর আনবেনই বা কি ? তারা এ-দেশের ভাষা জানে না, রাজস্বব্যবস্থা বোঝে না, কোন দণ্ডনীতি কঠোর আর কোনটাই বা অতি সদয় বলে দেশের লোকের মনে হবে—এ সম্বন্ধে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। বখশী ( চীফ পে-মাস্টার, অ্যাকাউন্টেনট-কম-অডিটার জেনারেল ), কানুনগো ( লিগেল রিমেমব্রেনসার), সরকার ( চীফ সেক্রেটারি), মুনশী (হুজুরের ফরমান লিখনেওলা, নূতন আইন নির্মাণের খসড়া প্ৰস্তুতকারী), ওয়াকে’-নওয়ীস ( যার থেকে Waqnis), পর্চানওয়ীস ( রাজকর্মচারীর আচরণ তথা দেশের জনসাধারণ সম্বন্ধে রিপোর্ট তৈরী করনেওলা ) এসব গুরুত্বপূর্ণ পদ গ্ৰহণ করবে। কারা ? আমরা জানি, কায়স্থর স্মরণাতীত কাল থেকে এসব কাজ করে। আসছেন। এরাই এগিয়ে এলেন। মুসলমানপ্ৰাধান্য প্ৰায় দুশ বৎসর হল লোপ পেয়েছে, কিন্তু আজও এসব পদবী-প্ৰধানতঃ কায়স্থদের ভিতর-সম্পূর্ণ লোপ পায় নি।
Syed Mujtaba Ali (বড়বাবু)
আসলে আমি বুঝতে পারতুম না, কর্তারা, দাদারা এমন কি মা পর্যন্ত অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিলেন, আমার ভাইটি বাঁচবে না। তাঁরা আমাকে সে খবরটি দিতে চাননি। আমার জন্মের পূর্বে আমার এক দাদা আর দিদিও ঐ ব্যামােতে যায়। ডাক্তার-কবরেজরাও আমার দিকে এমন ভাবে তাকাতেন যে তার অর্থটা আজ আমার কাছে পরিষ্কার—তখন বুঝতে পারিনি। তবু তাদের এই চৌদ্দ বছরের ছেলেটির প্রতি দরদ ছিল বলে আসতেন, নাড়ী টিপতেন, ওষুধ দিতেন। ঐ দুই বছরের ভাইটি কিন্তু আমাকে চিনত সবচেয়ে বেশী -- কি করে বলতে পারবাে না। আমাকে দেখা মাত্রই তার রােগজীৰ্ণ শুকনাে মুখে ফুটে উঠতে ম্লান হাসি। সে হাসি একদিন আর রইল না। আমাকে সে ডরাতে আরম্ভ করলাে। আমাকে দেখলেই মাকে সে আঁকড়ে ধরে রইত। আমার কোলে আসতে চাইতাে না। আমার দোষ, আমি কবরেজের আদেশ মত তার নাক টিপে, তাকে জোর করে তেতাে ওষুধ খাইয়েছিলুম। ঐ ভয় নিয়েই সে ওপারে চলে যায়। তার সেই ভীত মুখের ছবি আমি বয়ে বেড়াচ্ছি, বাকি জীবন ধরে।
Syed Mujtaba Ali (বড়বাবু)
ইনসাফের (ন্যায়ধর্মের) কথা তুললেন, হুজুর, এ-দুনিয়ায় ইনসাফ কোথায়? আর বে-ইনসাফি তো তারাই করেছে বেশী, যাদের খুদা ধনদৌলত দিয়েছেন বিস্তর৷
Syed Mujtaba Ali (সৈয়দ মুজতবা আলীর শ্রেষ্ঠ গল্প)
ভ্রমণকাহিনী লিখতে লিখতে মানুষ আশকথা পাশকথা উত্থাপন করে। গুণীরা বলেন এটা কিছু দুষ্কর্ম নয়। সদররাস্তা ছেড়ে পথিক যদি পথ ভুলে আশপথ পাশপথ না যায় তবে অচেনা ফুলের নয়া নয়া পাখির সাথে তার পরিচয় হবে কী প্রকারে?
Syed Mujtaba Ali (মুসাফির)
ভেবে-চিন্তে অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা করে বই কেনে সংসারী লোক। পাঁড় পাঠক বই কেনে প্রথমে দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে, তারপর চেখে চেখে সুখ করে করে, এবং সর্বশেষে সে কেনে ক্ষ্যাপার মত, এবং চুর হয়ে থাকে মধ্যিখানে। এই একমাত্র ব্যসন, একমাত্র নেশা যার দরুন সকালবেলা চোখের সামনে সারে সারে গোলাপি হাতি দেখতে হয় না, লিভার পচে পটল তুলতে হয় না। ― Syed Mujtaba Ali
Sayed Mujtaba Ali